গায়েত্রী মন্ত্র - যথার্থ অর্থ GAYATRI MANTRA - TRUE MEANING IN BENGALI - SSPF
ওঁং ভূর্ভুবঃ স্বঃ। তৎসবিতুর্বরেন্যং।
ভর্গো দেবস্য ধীমহি।
ধিয়ো যো নঃ প্রচোদয়াৎ ওঁং।
- হে (ভূঃ-ভূবঃ-স্বঃ) ত্রিলোকেশ্বর ! সবিতাদেবের পরব্রহ্মাত্মক সেই বরণীয় তেজকে আমরা ধ্যান করি। সেই সবিতা আমাদের বুদ্ধি-বৃত্তিকে প্রেরিত করুন।ওঁ- ওম : সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের নামই ওম। ওমকে প্রণব মন্ত্র বলা হয়। হিন্দু ধর্মের সর্বজনগ্রাহ্য় মন্ত্র-ই ওম। ওম-ই আদি শব্দ।সমস্ত মন্ত্রের বীজ আছে এই ওম শব্দে। অ-উ-ম এই তিন অক্ষরের মিলনেই ওম উচ্চারণ হয়। "অ" শব্দে ব্রহ্মা অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তা ; "উ" অর্থাৎ বিষ্ণু বা পালনকর্তা ; আর "ম" বলতে বোঝায় মহেশ্বর - লয় কর্তা - যিনি সর্বদাই মঙ্গলময়। ওম শব্দটি যে কোনো বীজ মন্ত্রের আদি ও অন্তে ব্যবহৃত হয়। এটি মন্ত্রের বাঁধন।
ভূর্ভুবঃ স্বঃ(ভূঃ-ভূবঃ-স্বঃ) - ভূঃ :কথার মানে স্থিতি। ঈশ্বর স্বস্থিত। সমস্ত কারণের কারণ এই ঈশ্বর। এটি স্বাধীন, শ্বাশত , অপ্রাকৃত, অপরিবর্তনীয়। সীমাহীন - না আছে শুরু, না শেষ। সমস্ত তত্ত্বে এর অবস্থিতি, চিরকালীন অবস্থিতি, বিরামহীন গমন।
ভূ -এর অন্য অর্থ পৃথিবী। যে উৎপন্ন হয়েছিল বা যাতে উৎপন্ন হয়।
যেখানে আমরা জন্ম গ্রহণ করেছি।বেঁচে বর্তে আছি। এই পৃথিবীই আমাদের বেঁচে থাকার রসদ যোগাচ্ছে। তার পরম কৃপা যা আমাদের উপর প্রতিনিয়ত বর্ষিত হচ্ছে, আমাদেরকে রক্ষা করছে , জীবন দান করছে।
ভূ - আর এক অর্থে প্রাণ অথবা জীবন। স্থুল অর্থে নিঃস্বাস-প্রশ্বাস।
ভূবঃ- বলতে বোঝায় চেতনা। ঈশ্বরের চেতনা। চেতন স্বত্বা। এই চেতন সত্ত্বাই বিশ্বভুবন শাসন করছে। এই চেতন শক্তির দ্বারাই ঈশ্বর বিশ্বভুবনের সঙ্গে যোগসূত্র রক্ষা করছে। এই শক্তি আকাশ, বিশ্বচরাচর থেকেও বৃহৎ ব্যাপক। এই শক্তি বন্ধনহীন, অসীম। এই চেতনা সমস্ত যন্ত্রণার অবসানকারী। একেই বলে 'অপান'।
স্বঃ-স্বাহা - অর্থে ঈশ্বরের ব্যাপ্তির কথা বলা হচ্ছে। ইনি সর্বত্র স্বমহিমায় স্বেছায় প্রতিষ্ঠিত। বিশ্বব্রহ্মান্ড ব্যাপী সমস্ত কিছুতে এনার অবস্থিতি। নিজের কোনো রূপ না থাকলেও সমস্ত পার্থিব বস্তূতে ইনি প্রকট। এই ভাবেই তিনি নিজের সাথে ক্রীড়ারত। নিজের সৃষ্টিতে অবস্থান করছেন, অবগাহন করছেন,শাসন করছেন,সুস্থ ও সঠিক কার্যে রত থাকছেন।
তৎ - তৎ কথাটার মানে "সে" . এখানে সে অর্থাৎ ঈশ্বর।
সবিতুর -সবিতুর কথাটা এসেছে "সবিতা" থেকে। সবিতা অর্থাৎ সূর্যের তেজ থেকে তৈরি রশ্মি। এই গায়েত্রী মন্ত্রকে সাবিত্রী মন্ত্রও বলা হয়। ঈশ্বরের অপর নাম সবিতা। সমস্ত জাগতিক পদার্থের উৎস। সূর্যকে সবিতা বলা হয়। সূর্য্যের এই তেজই বা এই তেজের দ্বারাই পুষ্টিপ্রাপ্ত হচ্ছে জাগতিক সমস্ত পদার্থ। আমাদের পালনকর্তা এই সূর্য বা সূর্য-রশ্মি। অসংখ্য সূর্য্যরশ্মি অসংখ্য গুনের অধিকারী। একেই আমরা দেবতা বলি। তাই দেবতা আমাদের অসংখ্য।
বরেণ্যম : বরণ করি - আহ্ববান করি - গ্রহণ করি।
ভর্গো : ভর্গো অর্থাৎ জ্যোতি। শুদ্ধতা, পবিত্রতা, প্রেম, শক্তি। জ্যোতি আমাদের সব কিছু শুদ্ধ করে। জ্যোতির সংস্পর্শে এলে আমরা আমাদের শরীর, মন, আত্মাকে শুদ্ধ রাখতে পারি। অতএব জ্যোতি হচ্ছে ভগবানের শুদ্ধ-করন শক্তি। এই শক্তি মনের একাকিত্ব দূর করে, ভয় দূর করে,শুদ্ধ অন্তকরণ তৈরি করে। জ্যোতির ধ্যানে অসীম বিশুদ্ধতা মানুষকে মাথা উঁচু করে বাঁচতে সাহায্য করে।
দেবস্য : দেবতাদের - ঈশ্বরের অসীম গুনের কোনো একটি বা একাধিক গুনের অধিকারীকে দেবতা বা দেবী বলা হয়।
ধীমহি : ধ্যান করা। মনটাকে ঈশ্বরে নিবিষ্ট করা। মনের সমস্ত চিন্তাকে প্রত্যাহার করে ঈস্বরে সমর্পিত হওয়া। চিত্যবৃত্তিকে নিরুদ্ধ করে ঈশ্বরময় হয়ে যাওয়া। সমস্ত কর্ম ঈশ্বরকে উদ্দেশ্য করে করা, ফলাফল তাঁকেই সমর্পন করা।
ধীও : ধী অর্থাৎ বুদ্ধিমত্তা। আমার বুদ্ধিমত্তা তাঁর উপস্থিতিকে উপলব্ধি করুক। মন পার্থিব চিন্তামুক্ত হয়ে ঈশ্বর-চিন্তায় মগ্ন হোক।
য়ো : "কে" - "ওকে" - একমাত্র ওনাকেই।
নঃ : আমাদের - আমিত্ববিহীন আমাদেরকে।
প্রচোদয়াৎ : প্রেরণ করুন - সমস্ত গুনের আধার ঈশ্বর, আমাদেরকে জ্যোতি, রশ্মির সাহায্যে সমস্ত শুভ শক্তি ও গুন্ গুলো প্রেরণ করুন।